Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।
Global Village
sss
নিঞ্জা টেকনিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) : #001
"বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়েছে সহজ ও বিশ্বব্যাপী প্রসারিত।"
মুল পয়েন্ট (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #002
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
বিশ্বগ্রামের ধারণা হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও মানুষের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা। এতে পৃথিবীর মানুষ একে অপরের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদাহরণ: ভিডিও কল, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকা মানুষের সাথে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বগ্রামের প্রধান উপাদান। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।
উদাহরণ: হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো বা জুমের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আমরা এক ক্লিকে দূর দেশে থাকা বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করতে পারছে।
উদাহরণ: একজন ফ্রিল্যান্সার Upwork বা Fiverr এর মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে, এবং শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। Covid-19-এর সময়ে অনলাইন শিক্ষা এর প্রভাব আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।
উদাহরণ: 2020 সালে, বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা Zoom, Google Classroom এর মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছে, যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকার মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসা সেবা এখন আরও সহজলভ্য হয়েছে।
উদাহরণ: গ্রামের একজন রোগী এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে পারছে, যা পূর্বে অসম্ভব ছিল।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
তথ্য প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে। গবেষকদের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং জটিল হিসাব-নিকাশ পরিচালনা সহজতর হয়েছে।
উদাহরণ: গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশাল ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং একে অপরের সাথে সহজেই তথ্য শেয়ার করতে পারে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা এবং কাগজবিহীন ডিজিটালাইজেশন বিশ্বগ্রামের ধারণার বাস্তব প্রতিফলন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অফিসের কাজগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
উদাহরণ: Google Drive বা Dropbox এর মাধ্যমে অফিসের ফাইলগুলো অনলাইনে সংরক্ষণ ও শেয়ার করা যায়, যা অফিসের কাজকে দ্রুততর করে তুলছে।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করে তুলছে। হোম অটোমেশন সিস্টেম বাসস্থানকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করেছে।
উদাহরণ: আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরের লাইট বন্ধ বা চালু করতে পারেন, এমনকি দূরে থেকেও বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
ই-কমার্স এবং ই-বিজনেস বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ধারণা প্রসারিত করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিক্রয় এবং সরবরাহ সহজ হয়ে উঠেছে।
উদাহরণ: Amazon বা Daraz এর মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং পণ্যটি ঘরে বসেই পেয়ে যায়।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততর এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে। কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হয়।
উদাহরণ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বড় ঘটনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মাধ্যমগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে, যেমন টিভি, রেডিও, এবং ইন্টারনেট। মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সাথে যুক্ত হতে পারছে।
উদাহরণ: Netflix বা YouTube এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে আপনার পছন্দের সিনেমা বা ভিডিও দেখতে পারেন, এবং ফেসবুকে বিশ্বজুড়ে বন্ধুদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে জানা যাচ্ছে।
উদাহরণ: কোরিয়ান K-pop বা তুর্কি ড্রামা এখন শুধু কোরিয়া বা তুরস্কে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সামারি (বিশ্বগ্রামের ধারণা) #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন।
শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবেই আপনার পুরো তথ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো বোল্ড করে তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো ট্রপিক (বিশ্বগ্রামের ধারণা) Page: Shortcode: #003
১.১ বিশ্বগ্রামের ধারণা (Concept of Global Village)
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১.১.১ যোগাযোগ (Communication)
যোগাযোগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যোগাযোগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব বিনিময় করাকেও বোঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যোগাযোগ এবং এই যোগাযোগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। শত বছরের পুরনো তারযুক্ত টেলিফোন যন্ত্রের পরিবর্তে তারবিহীন মোবাইল ফোনের আবির্ভাব হয়েছে। তারবিহীন এ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইন্টারনেটের পরিষেবাগুলো যেমন ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ফ্যাক্স, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, গুগল মিট, জুম ইত্যাদির সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে টেলিযোগাযোগ (Telecommunication) এবং তথ্য যোগাযোগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়। ই-মেইল হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরো পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
১.১.২ কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকরি ও নিয়োগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পোর্টাল চালু আছে। এগুলোর মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com, www.everjobs.com ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
এই ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসোর্সিং (বহিঃউৎসরণ) বলে।
১.১.৩ শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নতুন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
শিক্ষা বিস্তারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ।
একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়।
বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন।
১.১.৪ চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালোভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা রোগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বোঝায়। এর মূল কথা হলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছেন।
১.১.৫ গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়োগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন ইত্যাদি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রায় সব জার্নাল আজকাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজেই যে কোনো গবেষক সেই বিশাল তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরো গতিশীল হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের কাছে দ্রুত পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
১.১.৬ অফিস (Office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে অফিসের কাজগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় এবং দ্রুততর হয়েছে। বড় বড় কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে এবং দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলো কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। গ্রাহকের সাথে ব্যবস্থাপনার মিথষ্ক্রিয়া এবং সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যোগাযোগও হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুরক্ষার জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলো ব্যবহারে ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.৭ বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন থেকে শুরু করে রিমোট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লাইটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজার করা সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
এই ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হোম (Smart Home) বলা হয় এবং এর পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়। স্মার্ট হোম হলো এক ধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতো, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযোজন পাওয়া যায় এবং এটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন হয়।
১.১.৮ ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনো দেশই এখন আর সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি দেশকে অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বিশ্বগ্রামের ব্যবসা।
ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্স বলতে বোঝায় আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ। ই-কমার্সের পরিচিত কিছু ওয়েবসাইট হলো: www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com।
১.১.৯ সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম অনেক দ্রুততর হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সারা বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ চ্যানেল যেমন বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে মানুষ এখন সহজেই খবর যাচাই করতে পারছে।
তবে ইন্টারনেট ভিত্তিক পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করার ফলে মিথ্যা সংবাদ এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মোকাবিলার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
১.১.১০ বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Entertainment and Social Communication)
বিনোদন মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনোদনের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানো, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যমই ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর, যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ও ইন্টারনেট।
অনলাইন নিউজ, টিভি প্রোগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র এখন যে কেউ যে কোনো স্থানে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে মানুষ সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সাথে যুক্ত হতে পারে।
তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপপ্রচারের ঝুঁকি থেকে যায়।
১.১.১১ সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অপরিসীম। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নও উল্লেখযোগ্য। বিশ্বায়নের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করছে এবং এর ফলে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।